এফএনএস ডেস্ক: দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা শতাধিক পুলিশ সদস্যকে প্রাসাদে ডেকে এনে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ফিলিপাইনের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এদের অনেকের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি মামলা রয়েছে। দুয়ার্তে তাদের হুমকি দিয়েছেন, নতুন করে আর একটি অপরাধ করলেও তার বিশেষ বাহিনী সেই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করবে। দুয়ার্তের এই হুমকির দৃশ্য স্থানীয় একটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। গত বছর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর থেকে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরেও শুদ্ধি অভিযান চলছে। একসময় পুলিশ বাহিনীকে ‘গোঁড়া আর দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে উল্লেখ করেছিলেন দুয়ার্তে। তবে মাদকবিরোধী সংস্থার জনবলে ঘাটতি থাকায় শেষপর্যন্ত পুলিশদেরও মাদকবিরোধী অভিযানে যুক্ত করেছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার দুয়ার্তের সঙ্গে দেখা করতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে যাওয়া ১০০-রও বেশি পুলিশ সদস্যের মধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রে এখনও ফৌজদারি মামলা হয়নি। তাদের অভিযোগ পুনর্বিবেচনাধীন রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের উপস্থিত হওয়া সব পুলিশ সদস্যকে গালি ব্যবহার করে দুয়ার্তে হুমকি দেন, তোমরা যদি না পাল্টাও (…) আমি তোমাদের খুন করব। তিনি বলেন ‘আমার একটি বিশেষ ইউনিট আছে যা আপনাদের ওপর জীবনভর নজর রাখবে এবং যদি আপনারা সামান্য কোনও ভুলও করেন, তবে আমি তাদেরকে আপনাদের হত্যার নির্দেশ দেব।’ পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সতর্ক করে দুয়ার্তে বলেন, যদি এরা মারা যায়, তাদের পরিবার থেকে যেন মানবাধিকারের দোহাই না দেওয়া হয়। কারণ এ ব্যাপারে তিনি আগেই সতর্ক করে রাখছেন। ছয় বছর মেয়াদের পুরোটা সময় মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার শপথ নিয়েছেন দুয়ার্তে। প্রায়ই জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়ে থাকেন তিনি। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সংঘটিত করার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন দুয়ার্তে। পুলিশ জানিয়েছে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান চলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুসংখ্যক সদস্যও নিহত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে, মাদকবিরোধী লড়াইয়ের ঝুঁকিও প্রমাণ হয়েছে। ব্যুরো অব কাস্টমস অ্যান্ড অ্যান্টি ড্রাগস অথরিটি গত মঙ্গলবার সে দেশে প্রায় ৫০০ কেজি ইয়াবা উদ্ধার হওয়ার কথা জানিয়েছে। স্থানীয়ভাবে একে শাবু নামে ডাকা হয়। ইয়াবাগুলো ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বন্দরে দুটি পরিত্যক্ত কন্টেইনার ভ্যানের দুটি স্টিলের সিলিন্ডারের ভেতর লুকানো ছিল।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়েই বন্দুকভক্তির জন্য দুয়ার্তের পরিচিতি রয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার আগে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের প্রথম ভাষণে দুয়ার্তে জানান, ফিলিপাইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি এবং গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়ানো ব্যক্তিদের গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হবে নিরাপত্তা বাহিনীকে। আর দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন দুয়ার্তে। তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি কোনও মাদকসেবীকে চিনে থাকেন তবে তবে তাদেরকে নিজেরাই হত্যা করুন। তাদের বাবা-মাকে এ কাজটি করতে বলাটা বেশি কষ্টের।’